Buscar

এবার ওয়াই-ফাই দশাশ্বমেধে

ধরা যাক, বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে বসে নিজের মোবাইলে গঙ্গা আরতির ছবি তুললেন নরেন্দ্র মোদী। তৎক্ষণাৎ তা টুইটারে পোস্ট করে দিলেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোবাইলে গঙ্গা আরতির ছবি তুলছেন, সেই ছবিটাও আবার তুললেন অনেকে। 

Morning_Varanasi
Morning_Varanasi

ধরা যাক, বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে বসে নিজের মোবাইলে গঙ্গা আরতির ছবি তুললেন নরেন্দ্র মোদী। তৎক্ষণাৎ তা টুইটারে পোস্ট করে দিলেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোবাইলে গঙ্গা আরতির ছবি তুলছেন, সেই ছবিটাও আবার তুললেন অনেকে। এবং তাঁদেরও অনেকে সেটা পোস্ট করে দিলেন নিজের নিজের ফেসবুক ওয়ালে। এ দিকে, চিত্র-সাংবাদিকেরা ঘাটে বসেই ল্যাপটপ থেকে অফিসে মেল করে দিলেন সেই ছবি। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ পর্যটক, সাংবাদিক গোটা সময়টায় কাউকেই ইন্টারনেটের ঝক্কি পোহাতে হল না। কারণ দশাশ্বমেধ ঘাটের পুরোটাই ‘ওয়াই-ফাই জোন’!

আপাতত কল্পনা। তবে কিছু দিনের মধ্যে গোটাটাই বাস্তব হতে চলেছে। বেঙ্গালুরু নয়। হায়দরাবাদ নয়। পুণে বা কলকাতার সেক্টর ফাইভ নয়। নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র মুখ হয়ে উঠতে চলেছে তাঁরই নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী। আরও নির্দিষ্ট করে বললে দশাশ্বমেধ ঘাট। বারাণসী বললেই যে দু’টো জায়গার কথা প্রথমেই মনে আসবে, তা হল বিশ্বনাথ মন্দির ও দশাশ্বমেধ ঘাট (আর বাঙালি হলে মনে পড়বেই ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’)। কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই দশাশ্বমেধ ঘাটে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু হতে চলেছে। ‘ওয়াই-ফাই জোন’ তৈরি হবে শীতলা ঘাটেও। যার অর্থ, এই দুই ঘাটে বসে যে কোনও মোবাইল, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপে সস্তায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ মিলবে। বিশেষত বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই মেলবন্ধনটাই ঘটাতে চাইছেন মোদী।

সরকারি সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে লখনউতে বিএসএনএল দফতরে নির্দেশ যায়। তখন থেকেই বিএসএনএল-এর ইঞ্জিনিয়াররা মাঠে নেমে পড়েন। ইতিমধ্যেই দশাশ্বমেধ ঘাটে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেঙ্গালুরুর একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে। এক বার পরীক্ষামূলক ভাবে ওয়াই-ফাই চালু করেও দেখা হয়েছে।

আসলে প্রযুক্তিগত দিক থেকেও ব্যাপারটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এ দেশে সরকারি-বেসরকারি অফিস, বিমানবন্দর, হোটেল, রেস্তোরাঁয় ওয়াই-ফাই পরিষেবা মিললেও খোলা জায়গায় এখনও সেই সুযোগ প্রায় ছিলই না। তবে কিছুদিন আগে দিল্লির কনট প্লেসে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু হয়েছে। সে দিক থেকে দশাশ্বমেধ এক অভিনব সংযোজন। বারাণসী থেকে বিএসএনএল-এর এক কর্তা বললেন, “বারাণসী এমনিতেই পুরনো শহর। বড় বড় হাভেলি, ঘিঞ্জি গলির জন্য ওখানে মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি খুবই কম থাকে। গঙ্গার ঘাটে আরও সমস্যা হয়। অথচ গোটা দেশের মতো বিদেশ থেকেও প্রচুর পর্যটক বারাণসীতে আসেন। দশাশ্বমেধ ঘাটে বসে ওয়াই-ফাই সংযোগ পেলে তাঁরাও চমকে যাবেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়া-র এর থেকে ভাল বিজ্ঞাপন আর হয় না।”

অগস্টে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছিল মোদী মন্ত্রিসভা। ২০১৮-র মধ্যে দেশের প্রতিটি কোণে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারি পরিষেবার কাছাকাছি এনে দেওয়াই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, “যাঁরা ইন্টারনেটের সুবিধা পাচ্ছেন আর যাঁরা পাচ্ছেন না দেশে তাঁদের মধ্যে এক ধরনের ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এই বৈষম্য মেটাতে হবে।” রবিশঙ্কর জানান, তাঁরা দেশজুড়ে জাতীয় অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন। প্রায় ৭ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হবে। সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ওয়াই-ফাই স্পট তৈরি হবে। গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে মোবাইল-ইন্টারনেট সংযোগ পাবেন।

যেমন পাওয়া যাবে বারাণসীর ঘাটে। বিএসএনএল সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতর থেকে নিয়মিত কাজের নজরদারি চলছে। সবুজ সঙ্কেত পেলেই দশাশ্বমেধে পাকাপাকি ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু করে দেওয়া হবে।

Original Link